বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ এক ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং দলটির সহযোগী সংগঠনগুলোর সব ধরনের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। এ নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দলটির বিরুদ্ধে বিচার কার্যক্রম সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত।
শনিবার রাতে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের এক বিশেষ সভায় এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। রাত সাড়ে আটটা থেকে পৌনে ১১টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত সভা শেষে আইনবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল সংবাদ ব্রিফিংয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে এ ঘোষণা দেন।
ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে সংশোধনী অনুমোদন করেছে উপদেষ্টা পরিষদ, যার ফলে এখন থেকে ট্রাইব্যুনাল কোনো রাজনৈতিক দল, তাদের অঙ্গসংগঠন বা সমর্থক গোষ্ঠীকে যুদ্ধাপরাধ বা মানবতাবিরোধী অপরাধে দোষী প্রমাণিত হলে শাস্তি দিতে পারবে।
ড. আসিফ নজরুল বলেন, “জাতীয় নিরাপত্তা, সার্বভৌমত্ব ও গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা রক্ষার্থে এবং জুলাই আন্দোলনের নেতাকর্মী ও ট্রাইব্যুনালের সাক্ষীদের সুরক্ষার স্বার্থে আওয়ামী লীগের সকল কার্যক্রম আপাতত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। প্রয়োজনীয় পরিপত্র পরবর্তী কর্মদিবসে জারি করা হবে।”
সভায় আরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, ২০২৪ সালের জুলাই মাসের গণ-অভ্যুত্থানের পর গৃহীত “জুলাই ঘোষণাপত্র” আগামী ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে চূড়ান্ত করে জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে।
উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে গুম, হত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে কয়েকটি মামলা বর্তমানে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন। এসব অভিযোগে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হয়। এরপর থেকেই বিচার কার্যক্রম ও গণআন্দোলনের মুখে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়, যা এখন এসব মামলার দ্রুত নিষ্পত্তিতে কাজ করে যাচ্ছে।
গত তিন দিন ধরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সংগঠন ও ছাত্রজনতা আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধের দাবিতে টানা কর্মসূচি পালন করে আসছিল। এরই পরিপ্রেক্ষিতে অন্তর্বর্তী সরকারের এই কঠোর পদক্ষেপ।
বিশ্লেষকদের মতে, এই সিদ্ধান্ত দেশের রাজনীতিতে এক নতুন দিক নির্দেশ করবে এবং দীর্ঘদিন ধরে চলা বিচারহীনতার সংস্কৃতি ভেঙে ন্যায়বিচারের একটি নতুন ধারা প্রবর্তনের সম্ভাবনা তৈরি করবে।