স্মার্টফোন আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। তথ্য খোঁজা, যোগাযোগ, বিনোদন কিংবা দৈনন্দিন প্রয়োজন মেটানো—সব ক্ষেত্রেই নির্ভরতা বাড়ছে হাতের মুঠোয় থাকা এই ডিভাইসটির ওপর। কিন্তু এই নির্ভরতা এখন মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে বলে সতর্ক করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
সম্প্রতি একাধিক গবেষণায় উঠে এসেছে, অতিরিক্ত স্মার্টফোন ব্যবহার মানুষের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উদ্বেগ, দুশ্চিন্তা ও ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে। দিনরাত স্মার্টফোনের পর্দায় চোখ রেখে জীবনের বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে অনেকেই। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অতিরিক্ত সময় ব্যয় করাকে মনে করা হচ্ছে এই উদ্বেগের অন্যতম উৎস।
মানসিক স্বাস্থ্য বিশ্লেষকরা বলছেন, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টিকটকের মতো প্ল্যাটফর্মে অন্যের সুখী ও সজ্জিত জীবনের ছবি দেখে নিজের জীবনের সঙ্গে তুলনা করতে গিয়ে অনেকেই অজান্তেই মানসিক চাপে ভুগতে শুরু করেন। সেই সঙ্গে নেতিবাচক মন্তব্য ও সমালোচনার ভয়ে তৈরি হয় একধরনের মৃদু আতঙ্ক, যা ধীরে ধীরে উদ্বেগে রূপ নেয়।
আরও উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে—রাতে ঘুমানোর আগে স্মার্টফোন ব্যবহার করলে এর পর্দার নীল আলো মস্তিষ্কে ঘুম-উদ্দীপক হরমোন ‘মেলাটোনিন’-এর নিঃসরণে বাধা সৃষ্টি করে। ফলে ঘুমের গুণমান কমে যায়, ঘুমাতে দেরি হয় এবং পরবর্তী দিনগুলোতে মানসিক চাপ আরও বাড়তে থাকে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্মার্টফোন ব্যবহারের জন্য সময় নির্ধারণ ও নিয়ন্ত্রণ আরোপ এখন সময়ের দাবি। ঘুমানোর আগে অন্তত এক ঘণ্টা ফোন না ধরা, খাওয়ার সময় ও গাড়ি চালানোর সময় ফোন ব্যবহার না করা এবং দৈনিক নির্দিষ্ট সময়ের বাইরে ফোন থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
এ বিষয়ে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. সাফওয়ান ইসলাম বলেন, “স্মার্টফোনের মাধ্যমে আমরা অনেক সুবিধা পাচ্ছি ঠিকই, কিন্তু এর অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যে মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। এখন থেকেই সীমা টেনে না দিলে ভবিষ্যতে এ থেকে মুক্তি পাওয়া কঠিন হয়ে পড়বে।”
ডিজিটাল সংযোগে সুবিধা থাকলেও বাস্তব জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লে সামাজিক সম্পর্ক দুর্বল হয় এবং মানুষ একাকিত্বে ভুগতে থাকে। ফলে উদ্বেগ ও হতাশা আরও প্রকট হয়ে ওঠে বলে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।