প্রতিবছর বর্ষা এলেই সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার হাওরপারের অসংখ্য গ্রামে যোগাযোগব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। রাস্তাঘাট ডুবে যায় পানিতে, আর তার প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়ে শিশু শিক্ষার্থীদের ওপর। বিদ্যালয়মুখী হওয়ার বদলে তারা বাধ্য হয়ে থেকে যায় ঘরে বা জড়িয়ে পড়ে পারিবারিক ও কৃষিকাজে।
উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের ২৪৯টি গ্রামের মধ্যে এখনো ১১৫টিতে নেই কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয়। বর্ষাকালে বিশেষ করে শ্রীপুর উত্তর, শ্রীপুর দক্ষিণ ও দক্ষিণ বড়দল ইউনিয়নের অনেক গ্রাম জলমগ্ন হয়ে পড়ে, ফলে এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে যাতায়াত হয়ে পড়ে প্রায় অসম্ভব।
গত শনিবার ও রবিবার মন্দিয়াতা নতুন হাটি, মুজরাই, বেতাগড়া, তেলিগাঁও পশ্চিমপাড়া, কৃষ্ণতলা ও জামালপুর গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে—শিশুরা বিদ্যালয়ে না গিয়ে সময় কাটাচ্ছে বাড়ির উঠানে বা কৃষিকাজে সহায়তা করে।
দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নের শাহগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুবাশ্বির আলম জানান, “বর্ষার সময় অভিভাবকেরা নৌকায় করে শিশুদের স্কুলে পাঠাতে আগ্রহী নন। ফলে উপস্থিতি প্রায় অর্ধেকে নেমে আসে।”
রাজধরপুর গ্রামের হাদিছনূর মিয়া বলেন, “নিজ গ্রামে বিদ্যালয় না থাকায়, বর্ষায় সন্তানদের অন্য গ্রামে পাঠানো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। পানি আর কাদামাটির কারণে অনেক সময় হাঁটাও যায় না।”
তাহিরপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি অজয় কুমার দে জানান, “প্রতিবছর বর্ষায় অনেক শিক্ষার্থী দীর্ঘদিন বিদ্যালয়ের বাইরে থেকে যায়। এতে তাদের মধ্যে শিক্ষার আগ্রহ কমে আসে এবং অনেকে আর ফিরেও আসে না।”
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আবুল হাসেম বলেন, “এটা একটি দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা। যেসব গ্রামে বিদ্যালয় নেই, সেখানে দ্রুত স্কুল স্থাপনের বিষয়টি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।”
অতিবর্ষণের ফলে তৈরি হওয়া এই অচলাবস্থার স্থায়ী সমাধানে স্থানীয়রা প্রত্যন্ত এলাকায় বিদ্যালয় স্থাপন ও বর্ষায় উপযোগী যাতায়াতব্যবস্থা গড়ে তোলার দাবি জানিয়েছেন। নয়তো প্রতিবছরই হাওরপারের শিশুরা শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিতই থেকে যাবে।