ভুয়া ডিগ্রি সনদ ব্যবহার করে ২০ বছরের বেশি সময় শিক্ষকতা করেছেন রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার হাটখুজিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রফিকুল ইসলাম সাজু। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলাফল অনুযায়ী ডিগ্রি কোর্সে তিনি ১১টি বিষয়ের মধ্যে সাতটিতেই ফেল করেছিলেন। এর পরও জমা দেন একটি জাল সনদ, যেখানে তাকে দ্বিতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ দেখানো হয়। সেই সনদের ভিত্তিতে ২০০৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে চাকরি পান।
রফিকুলের ফলাফল অনুযায়ী, মনোবিজ্ঞান-৩ বিষয়ে তিনি পেয়েছিলেন মাত্র ৭ নম্বর, ভুগোল ও পরিবেশ বিদ্যায় ৮ এবং ইংরেজিতে মাত্র ২০। রাষ্ট্রবিজ্ঞান-২ এ কোনোমতে ৩৩ পেয়ে পাস করলেও, বাকিগুলোর সবই ফেল। অথচ এই রেজাল্টের বিপরীতে জাল সনদ জমা দিয়ে তিনি নিয়োগ পান, এমনকি ২০১৮ সালে এমপিওভুক্ত হয়ে সরকারি বেতন-ভাতাও তুলছেন।
স্থানীয়ভাবে দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ রয়েছে যে, রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার কারণে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়নি। বর্তমানে তিনি উপজেলা বিএনপির এক শীর্ষ নেতার ঘনিষ্ঠ বলে জানা গেছে।
সর্বশেষ ২০২৫ সালের ৭ মে হাটখুজিপুর গ্রামের বাসিন্দা আবু রায়হান রফিকুল ইসলামের জাল সনদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) রাজশাহীর ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালকের কাছে। এর আগেও ২০২৪ সালের ১০ অক্টোবর জেলা প্রশাসকের কাছে একই অভিযোগ করেন তিনি। কিন্তু এখনো তদন্ত শুরু হয়নি।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলাফলের আর্কাইভে এখনো রফিকুলের ফেল মার্ক করা ফল প্রকাশিত আছে। এমনকি তার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মোহনপুর ডিগ্রি কলেজ থেকেও একাধিকবার প্রত্যয়ন দেওয়া হয়েছে যে, তিনি ডিগ্রিতে অকৃতকার্য হয়েছেন। ২০০৪ সালে তৎকালীন অধ্যক্ষ আনিসুর রহমান ও ২০২৫ সালে বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শেখ মো. বারী ইয়ামিন বখতিয়ার এ সংক্রান্ত প্রত্যয়নপত্র প্রদান করেন।
হাটখুজিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইসাহাক আলী বলেন, “এসব অভিযোগ বিভিন্ন দপ্তরে গেছে। তবে আমার কাছে কোনো তদন্ত চাওয়া হয়নি। আমি কিছু জানি না।”
অভিযুক্ত শিক্ষক রফিকুল ইসলাম এ বিষয়ে বলেন, “আমি প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দিয়েছি। সব মিটমাট হয়ে গেছে। আর কিছু বলতে চাই না।”
মাউশির রাজশাহী অঞ্চলের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক মোহা. আবদুর রশিদ বলেন, “আমি এ পদে নতুন এসেছি। অভিযোগটি এখনো দেখিনি। অভিযোগ খুঁজে বের করে তদন্ত শুরু করব।”
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, রফিকুলের সনদ যে ভুয়া, তা এলাকাবাসী সবাই জানে। তবে প্রশাসন কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। স্থানীয় একজন বলেন, “এখানে টাকার খেলা চলছে। না হলে এমন একজন ভুয়া সনদধারী শিক্ষক দুই দশক ধরে কিভাবে বেতন তুলছেন?”
প্রশাসনের উদাসীনতায় প্রশ্ন তুলছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরাও। তদন্ত ও উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি এখন এলাকাবাসীর মুখে মুখে।