আইন মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত গেজেট বাতিলের দাবিতে রাজবাড়ীতে মানববন্ধন করেছেন জেলার আইনজীবীরা। গত ১ জুলাই ঘোষিত গেজেটে বলা হয়েছে, চেক ডিজঅনার, যৌতুক নিরোধ, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, পারিবারিক আদালত আইন এবং সম্পত্তি বণ্টনের মতো মামলাগুলো সরাসরি আদালতে দায়ের করা যাবে না। বরং মামলা দায়েরের আগে লিগ্যাল এইড কর্তৃক আপসের চেষ্টা করতে হবে। আপস ব্যর্থ হলে তবেই মামলা গ্রহণযোগ্য হবে।
এই গেজেটের প্রতিবাদ জানিয়ে বুধবার (৯ জুলাই) দুপুর ২টা থেকে রাজবাড়ী জেলা বার এসোসিয়েশনের আয়োজনে জেলা আদালত চত্বরে ঘণ্টাব্যাপী এক মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন রাজবাড়ী জেলা বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অ্যাডভোকেট হাবিবুর রহমান বাচ্চু।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, এ গেজেটের ফলে সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে নারী ও শিশু নির্যাতনের শিকাররা বিচারের জন্য আরও দীর্ঘ ও হয়রানিমূলক পথ অতিক্রম করতে বাধ্য হবেন। এতে যেমন মামলার প্রাথমিক গোপনীয়তা ক্ষুণ্ন হবে, তেমনি বিচারপ্রার্থীদের উপর মানসিক চাপও বাড়বে।
সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট স্বপন কুমার সোম বলেন, “সরকার এমন একটি গেজেট দিয়ে আমাদের বিচারব্যবস্থার মেরুদণ্ডে আঘাত করেছে। যেখানে নারী ও শিশু নির্যাতনের মতো স্পর্শকাতর মামলা দাখিলের আগেই আপসের কথা বলা হয়েছে, যা একপ্রকার ভুক্তভোগীকে বাধ্য করার শামিল।” সাবেক সম্পাদক অ্যাডভোকেট লিয়াকত আলী বাবু বলেন, “চেক ডিজঅনারের মামলায় অভিযুক্ত অনেকেই সশস্ত্র প্রভাবশালী হয়। মামলার আগেই আপসে গেলে প্রভাব খাটিয়ে প্রতিকার না পাওয়ার শঙ্কা থাকে। এ ধরনের আইন ভুক্তভোগীদের আরও দুর্বল করে তোলে।”
মানববন্ধনে আরও বক্তব্য রাখেন—অ্যাডভোকেট কেএ বাড়ী, অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট কামরুল আলম, অ্যাডভোকেট সফিকুল ইসলাম সফিক। তাঁরা বলেন, আদালতে মামলা করার অধিকার সাংবিধানিক অধিকার। সেটিকে আগে আপসের মাধ্যমে ‘ফিল্টার’ করে দেওয়ার মানে বিচার প্রার্থনার মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ন করা। বক্তারা বলেন, “লিগ্যাল এইড হচ্ছে একটি সহায়তা সংস্থা, বিচার ব্যবস্থার মূল প্রবেশদ্বার নয়। এখন যদি সব মামলা সেখানে আগে যায়, তাহলে তার নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন উঠবে।”
মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারী আইনজীবীরা বলেন,
এই গেজেট কার্যকর হলে সাধারণ মানুষ বুঝতেই পারবে না কোথায় যেতে হবে, কী করতে হবে। এতে মামলার সময়সীমা দীর্ঘ হবে, প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করাও কঠিন হয়ে যাবে। বিশেষ করে যারা পারিবারিক নির্যাতনের শিকার—তারা বহুক্ষেত্রেই মানসিক, শারীরিক ও সামাজিক চাপে থাকেন। তাঁদের জন্য এই অতিরিক্ত ধাপ বিপজ্জনক।
মানববন্ধন সঞ্চালনা করেন জেলা বার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুর রাজ্জাক (২)। তিনি বলেন, “এই গেজেট আমাদের আইন পেশাকে শুধু দুর্বলই করবে না, বরং বিচারপ্রার্থীদের প্রতি অবিচার করা হবে। আমরা চাই—এই গেজেট অবিলম্বে বাতিল করা হোক। না হলে সারাদেশব্যাপী কঠোর কর্মসূচি ও আইনজীবী আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।”
আইনজীবীদের দাবি, সরকার দ্রুত গেজেটটি বাতিল করে মানুষকে হয়রানি থেকে মুক্ত করুক।