আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে বিলাসবহুল পণ্যে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) দ্বিগুণ করার পরিকল্পনা করছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এই পরিকল্পনা অনুযায়ী, স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত এয়ারকন্ডিশনার, রেফ্রিজারেটর ও মোবাইল হ্যান্ডসেটের উপর ভ্যাট ৭.৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হতে পারে। এতে করে রাজস্ব আয় বাড়লেও চাপে পড়বেন দেশীয় উৎপাদক ও উদ্যোক্তারা।
বর্তমানে এসব পণ্যের উপর ভ্যাট হ্রাসকৃত হারে আরোপিত হলেও আগামী ৩০ জুন এসআরও-র মেয়াদ শেষ হওয়ার পর তা নবায়ন না করার চিন্তাভাবনা করছে এনবিআর। এর ফলে স্থানীয় উৎপাদকদের উৎপাদন ও সরবরাহ পর্যায়ে দ্বিগুণ হারে ভ্যাট দিতে হতে পারে।
এনবিআরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে শুধু এসি ও রেফ্রিজারেটর খাত থেকেই অতিরিক্ত ২০০০ কোটি টাকা রাজস্ব আহরণ সম্ভব হবে। বর্তমানে এ দুটি খাত থেকে প্রায় ১০০০ কোটি টাকা রাজস্ব পাওয়া যায়।
তবে খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এর ফলে স্থানীয় শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর বাড়তি চাপ পড়বে এবং বাজারে পণ্যের দাম বাড়বে। গ্রাহকদের জন্য এসির দাম বাড়তে পারে প্রতিটি ইউনিটে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত। এর ফলে বাজারে বিক্রি কমে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।
ফেয়ার গ্রুপের এক কর্মকর্তা জানান, দেশের ইলেকট্রনিক্স বাজার বর্তমানে প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলারের, যার ৯০ শতাংশই স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত। কিন্তু উচ্চ ভ্যাটের কারণে বাজারের প্রবৃদ্ধি ধীর হচ্ছে। বাজার গবেষণা বলছে, এসি খাতের বার্ষিক প্রবৃদ্ধি হার ১১ শতাংশ হলেও ভ্যাট বাড়লে সেই প্রবৃদ্ধি হুমকির মুখে পড়বে।
এদিকে মোবাইল হ্যান্ডসেট শিল্পেও ভ্যাট বাড়ানোর সিদ্ধান্ত কার্যকর হতে যাচ্ছে। বর্তমানে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত হ্যান্ডসেটে ৫ থেকে ৭.৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ রয়েছে, যা এবার ২.৫ শতাংশ হারে বাড়তে পারে। খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এর ফলে বাজারে বৈধ হ্যান্ডসেটের দাম বাড়বে এবং চোরাই ও আমদানিকৃত পণ্যের প্রতি ভোক্তাদের আগ্রহ বাড়বে।
কর বিশেষজ্ঞ স্নেহাশীষ বড়ুয়ার মতে, ফ্রিজ ও এসি শিল্প বর্তমানে স্বনির্ভর হলেও হঠাৎ করে ভ্যাট বাড়ালে শিল্পের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হবে। ধাপে ধাপে ভ্যাট সমন্বয়ের পরামর্শ দেন তিনি।
দেশীয় ব্র্যান্ড ওয়ালটন, যমুনা, ভিশন ও সিঙ্গার ইতোমধ্যে বাজারে শক্ত অবস্থান গড়ে তুলেছে। ফ্রিজের বাজারে বছরে প্রায় ৩৩ থেকে ৩৫ লাখ ইউনিট বিক্রি হয় এবং বাজারের আকার ১২ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। এসি বিক্রির পরিমাণ বছরে প্রায় ৬.২ লাখ ইউনিট, যেখানে ১৪ শতাংশ বার্ষিক প্রবৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে।
বাজার সংশ্লিষ্টদের আশঙ্কা, হঠাৎ করে ভ্যাট দ্বিগুণ করা হলে শিল্পে বিনিয়োগ কমে যাবে, কর্মসংস্থান হ্রাস পাবে এবং ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ উদ্যোগ ব্যাহত হবে।
সরকার রাজস্ব বাড়ানোর যে উদ্দেশ্য নিয়েছে তা গ্রহণযোগ্য হলেও, বিশেষজ্ঞ ও উদ্যোক্তারা বলছেন, সেটা হওয়া উচিত দীর্ঘমেয়াদি ও ধাপে ধাপে পরিকল্পনার মাধ্যমে, যাতে ভোক্তা ও উৎপাদক—উভয়েরই স্বার্থ সংরক্ষিত থাকে।
এই বিষয়ে আপনার মতামত কী?