নিউজ ডেস্ক: সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেছেন, জাতির শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ থাকা অপরিহার্য। রাজধানীর মহাখালী রাওয়া ক্লাবে জাতীয় শহীদ সেনা দিবসের অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “আমি আপনাদের সতর্ক করে দিচ্ছি, পরে বলবেন আমি সতর্ক করিনি। যদি আমরা নিজেরাই কাদা ছোড়াছুড়ি, মারামারি, কাটাকাটি করি, তাহলে এই দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়বে।” তিনি আরও বলেন, “আমার একটাই আকাঙ্ক্ষা—এই দেশ এবং জাতিকে একটি সুন্দর জায়গায় রেখে আমরা সেনানিবাসে ফেরত আসব।”
জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, “আমরা নিজেদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে অপরাধীদের জন্য সুযোগ তৈরি করছি। আমরা যদি সংগঠিত ও ঐক্যবদ্ধ থাকি, তাহলে একসঙ্গে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্ভব।” তিনি পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, ডিজিএফআই, এবং এনএসআই এর ভূমিকার প্রশংসা করে বলেন, “এই সংস্থাগুলোর কার্যকর ভূমিকার জন্যই দেশে একটি সুন্দর পরিবেশ টিকে আছে।”
তিনি স্পষ্ট করে বলেন, “দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব শুধু সেনাবাহিনীর নয়। দুই লাখ পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, আনসারসহ অন্যান্য বাহিনী আছে। আমাদের ৩০ হাজার সৈন্য দিয়ে পুরো পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব নয়, তবে আমরা দিনরাত চেষ্টা করে যাচ্ছি।”
জাতীয় ঐক্যের গুরুত্ব তুলে ধরে সেনাপ্রধান বলেন, “আমরা একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের দিকে এগোচ্ছি। সরকার প্রয়োজনীয় সংস্কার করবে। আমরা একসঙ্গে কাজ করব, যাতে দেশ সঠিক পথে পরিচালিত হয়।” তিনি সতর্ক করেন, “নিজেদের মধ্যে বিভেদ ভুলে কাজ না করলে দেশ ও জাতি বিপন্ন হবে।”
বিডিআর হত্যাকাণ্ড প্রসঙ্গে জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, “বিডিআর হত্যাকাণ্ড তৎকালীন বিডিআর সদস্যরাই ঘটিয়েছে। কোনো সেনা সদস্য এর সঙ্গে জড়িত নয়। বিচারিক প্রক্রিয়া ১৬-১৭ বছর ধরে চলেছে এবং অপরাধীরা শাস্তি পেয়েছে। এ বিষয়ে ভিন্ন মত পোষণ করা বিচারকে বাধাগ্রস্ত করবে।”
তিনি আরও বলেন, “যেসব বিডিআর সদস্য শাস্তি পেয়েছে, তারা শাস্তি পাওয়ার যোগ্য। রাজনৈতিক নেতারা বা বাইরের শক্তি জড়িত ছিল কি না, তা কমিশন তদন্ত করে জানাবে।” তিনি আশ্বাস দেন যে, বিচারিক প্রক্রিয়ায় অন্যায় হলে তা সংশোধনের জন্য বোর্ড গঠন করা হয়েছে, এবং সুপারিশ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
সেনাপ্রধান তার বক্তব্যে দৃঢ় কণ্ঠে বলেন, “এনাফ ইজ এনাফ। আমরা আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য একটি সুন্দর দেশ রেখে যেতে চাই। ঐক্যবদ্ধ থাকলে দেশ সঠিক পথে এগিয়ে যাবে।”
এই বক্তব্যে তিনি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান এবং দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সবাইকে একসঙ্গে কাজ করার তাগিদ দেন।