রাজবাড়ী জেলা কারাগারে বন্দিদের সঙ্গে দেখা করতে আসা দর্শনার্থীরা প্রতিনিয়ত চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে, কারাগারের বাইরের অংশে দর্শনার্থীদের জন্য নির্ধারিত কোনো বসার ব্যবস্থা নেই। ফলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা তাদের রোদে, বৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হয
বিশেষ করে বর্ষাকালে সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করে। বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) সকাল ১০টার দিকে রাজবাড়ী জেলা কারাগারের মূল ফটকের সামনে দেখা যায়, প্রায় ২০ জন দর্শনার্থী ভেতরে থাকা স্বজনদের সঙ্গে দেখা করার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছেন। হঠাৎ শুরু হওয়া মুষলধারে বৃষ্টিতে তাদের কেউ আশপাশের দোকানে, কেউ বা পার্ক করা ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার মধ্যে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন।
রাজবাড়ী সদর উপজেলার বরলক্ষীপুর গ্রামের বাসিন্দা রমজান ফকির বলেন, “ভাস্তে তিন মাস ধরে জেলে আছে। সকালে ৯টায় আসছি, অথচ এখন বলা হচ্ছে দেখা হবে দুপুর ১টার পর। বসার জায়গা নাই, উপরে আবার বৃষ্টি। একদম ভিজে গেছি।”
ফরিদপুর থেকে আসা সুফিয়া বেগম বলেন, “সকালে এসেছি ছেলের সঙ্গে দেখা করতে, কিন্তু এখনো দেখা হয়নি। বাইরে দাঁড়িয়েই থাকতে হচ্ছে।”
গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া থেকে আসা লতিফা আক্তার বলেন, “প্রতিমাসে স্বামীকে দেখতে আসি। ছেলেকেও সঙ্গে আনতে হয়। রোদ-বৃষ্টিতে এখানে দাঁড়িয়ে থাকা যায় না। এত কষ্ট লাগে।”
জানা গেছে, বর্তমানে রাজবাড়ী জেলা কারাগারে বন্দির সংখ্যা চার শতাধিক। কারাবিধি অনুযায়ী, গ্রীষ্মকালে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা এবং দুপুর ১টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত দর্শনার্থীরা বন্দিদের সঙ্গে দেখা করতে পারেন। শীতকালে সময় কিছুটা কমে যায়। কিন্তু এ সময়ের মধ্যে কোনো প্রকার বসার ব্যবস্থা না থাকায় ভোগান্তির সীমা থাকে না দর্শনার্থীদের জন্য।
এ বিষয়ে রাজবাড়ী জেলা কারাগারের জেল সুপার মোঃ এনামুল কবির বলেন, “দর্শনার্থীদের বসার জায়গা নেই—এটা সত্যি। বিষয়টি গণপূর্ত বিভাগকে জানানো হয়েছে। তারা ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে জানিয়েছে।”
বিষয়টি নিয়ে রাজবাড়ী জেলা প্রশাসক সুলতানা আক্তারের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
জনগণের অভিযোগ, রাজবাড়ী জেলার প্রধান এই কারাগারে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ আসেন বন্দিদের সঙ্গে দেখা করতে। কিন্তু বছরের পর বছরেও যদি ন্যূনতম মানবিক সুযোগ-সুবিধা না থাকে, তাহলে এই ব্যবস্থাপনা প্রশ্নবিদ্ধ। এখন দর্শনার্থীদের একটাই দাবি—অবিলম্বে যেন একটি ছায়াযুক্ত, শৌচাগারসহ বসার স্থানের ব্যবস্থা করা হয়।