রাজবাড়ী সদর উপজেলার খানখানাপুর ইউনিয়নের ডিগ্রীর চর চাঁদপুরে স্থাপিত এসিআই ব্যানারে পরিচালিত “আমিন এগ্রো ফার্ম লিঃ” এবং “অর্ণব জৈব সার কারখানা” নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক ও জনঅসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, মুরগির বিষ্ঠা, ছাই, জুট মিলের ডাস্টসহ বিভিন্ন উপাদানে তৈরি করা হচ্ছে ভেজাল ট্রাইকো-কম্পোস্ট সার, যার কারণে পরিবেশ মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে এবং জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়েছে।
দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ জনজীবন, অব্যবস্থাপনার ছড়াছড়ি
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, টিনের বেড়া দিয়ে ঘেরা কারখানায় উন্মুক্তভাবে রাখা হয়েছে সার তৈরির বিভিন্ন উপাদান—মুরগির বিষ্ঠা, ছাই, গোবর ইত্যাদি। আশপাশে বর্জ্য ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে, নেই কোনো বর্জ্য নিষ্কাশন বা স্বাস্থ্যসম্মত ব্যবস্থাপনা। এমনকি শিশু শ্রমিক নিয়োগসহ কারখানার নিরাপত্তা ও পরিবেশ বিষয়ক নিয়মনীতি উপেক্ষিত হচ্ছে। এলাকার মানুষ জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন ধরে দুর্গন্ধের কারণে বসবাসই দুষ্কর হয়ে উঠেছে।
সরকারি অভিযান: ৩ হাজার বস্তা ভেজাল সার জব্দ, ৫০ হাজার টাকা জরিমানা
গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত ৫ মার্চ রাজবাড়ী সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মারিয়া হকের নেতৃত্বে এবং কৃষি অফিসার মোঃ জনি খানের সহায়তায় পরিচালিত মোবাইল কোর্ট অভিযানে, এসিআই ব্যানারে মোড়কজাত প্রায় তিন হাজার বস্তা ভেজাল সার জব্দ করা হয়। ঘটনাস্থলেই ৫০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করে কারখানার কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
পরীক্ষায় অকাট্য প্রমাণ: ৩টি মৌলিক উপাদানের ঘাটতি
পরীক্ষার জন্য নমুনা পাঠানো হয় যশোর আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে। পরীক্ষায় প্রমাণিত হয়, ট্রাইকো-কম্পোস্ট সারে অর্গানিক কার্বন, ফসফরাস ও পটাশিয়াম—এই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদানের ঘাটতি রয়েছে। যা দেশের কৃষি খাতে ক্ষতির কারণ হতে পারে বলে জানান কৃষি কর্মকর্তারা।
প্রশাসনের বক্তব্য
রাজবাড়ী উপজেলা কৃষি অফিসার জনি খান বলেন, “কারখানাটি ভেজাল সার তৈরি করে কৃষকদের ক্ষতির মুখে ফেলে। পরীক্ষায় ত্রুটি প্রমাণিত হওয়ায় বাজারজাতকরণ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।”
পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক হারুন-অর রশীদ জানান, “আমি সরেজমিন পরিদর্শন করেছি। কিছু গুরুতর অসঙ্গতি পাওয়া গেছে। বিষয়টি রিপোর্ট আকারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট পাঠানো হয়েছে।”
মালিক পক্ষের বক্তব্য: দায় ঝেড়ে ফেললেন এসিআই
কারখানার স্বত্বাধিকারী মোঃ নুরুল আমিন শেখ দাবি করেন, “এটি সম্পূর্ণভাবে এসিআই নিয়ন্ত্রণ করে, আমি শুধু দেখাশোনা করি। কোনো ক্ষতি যাতে না হয়, সে বিষয়ে সচেতন আছি।”
তবে সার বস্তায় থাকা নম্বরে যোগাযোগ করলে, এক ব্যক্তি নিজেকে এসিআই ইয়াহামা মোটরস-এর প্রতিনিধি বলে দাবি করেন এবং নাম জিজ্ঞাসা করলে ফোন কেটে দেন। এতে প্রশ্ন উঠেছে, এসিআই-এর নাম ব্যবহার করে আসলেই কোম্পানিটি জড়িত কি না।
স্থানীয়দের দাবি
এলাকাবাসী কারখানাটি স্থায়ীভাবে বন্ধের দাবি জানিয়েছেন। তারা বলেন, “এখানে শুধু ভেজাল নয়, পরিবেশ ও স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি তৈরি হয়েছে। দিনের পর দিন দুর্গন্ধে জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে।”
সারসংক্ষেপে:
কারখানাটি বর্তমানে প্রশাসনের নির্দেশে বন্ধ থাকলেও অভিযোগ রয়েছে, রাতের আঁধারে গোপনে উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ অব্যাহত রয়েছে। এ বিষয়ে কঠোর নজরদারি ও স্থায়ী পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন পরিবেশ সচেতন এলাকাবাসী।