নিউজ ডেস্ক: অভাব-অনটনের মাঝেও দৃঢ় মনোবল আর অধ্যবসায়ের উদাহরণ হয়ে উঠেছেন রাজশাহীর বাগমারার বেড়াবাড়ি গ্রামের আসমাউল হুসনা (আঁখি)। ছোট চায়ের দোকান চালিয়ে ছয় সদস্যের সংসার চালানো বাবা ওবায়দুর রহমানের বড় মেয়ে আসমাউল এবার রাজশাহী মেডিকেল কলেজে এমবিবিএস প্রথম বর্ষে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। এই সাফল্য একদিকে আনন্দ বয়ে আনলেও অন্যদিকে ভর্তির খরচের চিন্তায় কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে পুরো পরিবারে।
আসমাউল হুসনা এবারের মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় ৯৯৮তম হয়েছেন। দরিদ্রতার মাঝে বেড়ে উঠেও তাঁর পড়ালেখার প্রতি ভালোবাসা ছিল অপরিসীম। প্রাথমিক শিক্ষাজীবন পার করেন গ্রামের বিদ্যালয়ে। এরপর স্থানীয় বালিকা বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে ২০২২ সালে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে ভর্তি হন রাজশাহী সরকারি মহিলা কলেজে। সেখানেও অর্জন করেন জিপিএ-৫।
তবে মেডিকেলে ভর্তির প্রস্তুতি নেওয়া ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। প্রাইভেট টিউশন বা কোচিংয়ের অর্থ জোগাড় করতে না পারায় ঘরেই নিজে নিজে পড়ালেখা চালিয়ে যান আসমাউল। তাঁর মা আরজিনা বিবি জানান, টাকার অভাবে মেয়েকে কোনো গাইড বইও কিনে দিতে পারেননি। তবুও মেয়ে কখনো হাল ছাড়েনি।
বাগান্না উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফরহাদ হোসেন বলেন, “আসমাউল হুসনা অত্যন্ত মেধাবী। নিজ প্রচেষ্টায় তিনি এই সাফল্য অর্জন করেছেন। তাঁর পড়ালেখা চালিয়ে যেতে সমাজের শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিদের এগিয়ে আসা উচিত।”
আসমাউলের বাবা ওবায়দুর রহমান জানান, বেড়াবাড়ি মোড়ে তাঁর একটি ছোট চায়ের দোকান। সেখান থেকে যা আয় হয়, তা দিয়েই সংসার চলে। মেয়ের ভর্তির খরচ কিভাবে জোগাড় করবেন, তা নিয়ে তিনি দুশ্চিন্তায় আছেন।
আসমাউল হুসনার অদম্য ইচ্ছাশক্তি ও অধ্যবসায় যেমন অনুপ্রেরণার গল্প, তেমনি তাঁর মেডিকেলে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার চ্যালেঞ্জ সামাজিক সহায়তার প্রয়োজনীয়তাকে তুলে ধরে। এই প্রতিভাবান শিক্ষার্থীর পাশে দাঁড়ানোর জন্য শিক্ষানুরাগী এবং সচ্ছল মানুষদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন এলাকার মানুষ।
অভাবের বিরুদ্ধে লড়াই করে আসমাউল যেভাবে নিজের স্বপ্নপূরণের পথে এগিয়ে যাচ্ছেন, তা দেশের লাখো দরিদ্র পরিবারের সন্তানদের জন্য এক বড় উদাহরণ।