নেশার অন্ধকারে ডুবে থাকা এক ব্যক্তির হাতেই প্রাণ গেলো একই পরিবারের তিন সদস্যের—দুই বোন ও এক শিশুর। নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে ঘটেছে এই মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ড, যা কাঁপিয়ে দিয়েছে গোটা এলাকাকে। অভিযুক্ত মো. ইয়াসিন (২৪), স্ত্রী লামিয়া আক্তার (২২), ছেলে রাফসান লাবিব (৪) এবং স্ত্রী’র বড় বোন স্বপ্না আক্তারকে (৩৫) হত্যা করে বস্তাবন্দি অবস্থায় রাস্তার পাশে ফেলে রাখেন বলে অভিযোগ।
গত ১১ এপ্রিল সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজি পশ্চিমপাড়া এলাকার একটি ময়লার স্তুপ থেকে তিনটি মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। একই পরিবারের এই তিনজনকে নির্মমভাবে হত্যা করে লাশ গুমের চেষ্টা চালানো হয়। এ ঘটনায় পুলিশ মূল অভিযুক্ত মো. ইয়াসিনকে গ্রেফতার করে এবং শনিবার আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন জানায়। শুনানি শেষে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
লামিয়ার বড় বোন মুনমুন আক্তার জানান, প্রায় ৫ বছর আগে প্রেম করে ইয়াসিনকে বিয়ে করেছিলেন লামিয়া। পরিবারের অমতে এই বিয়ে করলেও সুখের দেখা মেলেনি। ইয়াসিন ছিল বেকার ও নেশাগ্রস্ত। লামিয়া পোশাক কারখানায় চাকরি করে সংসার চালালেও নেশার টাকার জন্য প্রায়ই তাকে মারধর করতেন ইয়াসিন। ঈদের আগে চাকরিটিও হারান লামিয়া। এরপর থেকেই তাদের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
মুনমুন অভিযোগ করেন, “ইয়াসিন শুধু একা নয়, তার পরিবারও এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত। পরিকল্পিতভাবে তারা আমার দুই বোন ও ভাগ্নেকে মেরে ফেলেছে। লাশ গুম করতে গিয়ে আবর্জনার স্তুপে ফেলে দেয়।”
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার তদন্ত কর্মকর্তা মো. শাহাদত হোসেন বলেন, “গ্রেফতার ইয়াসিন এখনো সঠিক তথ্য দিচ্ছে না। একেক সময় একেক কথা বলছে। ধারণা করা হচ্ছে, সে এখনো নেশার ঘোরে রয়েছে। ইয়াসিনের বাবা দুলাল ও বোন শিমুর বিরুদ্ধেও তদন্ত চলছে এবং তাদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে।”
স্থানীয়দের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও শোকের ছায়া নেমে এসেছে। সবাই একবাক্যে বলছে, নেশার ভয়াবহতা কতটা ভয়ংকর হতে পারে, তার জ্যান্ত উদাহরণ এই ঘটনা।
এ ঘটনায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং তদন্ত চলছে। নিহতদের পরিবার দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।