ঢাকা: অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটের আকার কমিয়ে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকায় নির্ধারণের পরিকল্পনা নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। গত অর্থবছরের ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার তুলনায় নতুন বাজেট ৭ হাজার কোটি টাকা কম হচ্ছে।
মঙ্গলবার সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত আর্থিক, মুদ্রা ও বিনিময় হার-সংক্রান্ত সমন্বয় কাউন্সিল ও সম্পদ ব্যবস্থাপনা কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
সূত্রমতে, সরকার রাজস্ব আয় ও বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের চাপ বিবেচনায় নিয়ে বাজেটের আকার সীমিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) রাজস্ব আদায়ে প্রত্যাশা অনুযায়ী প্রবৃদ্ধি না হওয়ায় বাজেটে বড় আকারের প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “বর্তমানে আয় কম, খরচ বেশি। তাই বড় প্রকল্প নয়, বিদ্যমান প্রকল্পগুলোর কাজ এগিয়ে নেওয়া হবে। অগ্রাধিকার থাকবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং সামাজিক নিরাপত্তা সম্প্রসারণে।”
আগামী বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) জন্য বরাদ্দ রাখা হচ্ছে প্রায় ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, তথ্যপ্রযুক্তি এবং সামাজিক নিরাপত্তা খাতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হবে। বিশেষ গুরুত্ব পাবে গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন।
বাজেট ঘাটতি জিডিপির ৫ শতাংশের নিচে রাখার পরিকল্পনা রয়েছে, আর মূল্যস্ফীতি ৬.৫ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ৫.৫ শতাংশ, যদিও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর মতে এই হার ৫ শতাংশের নিচে থাকতে পারে।
জাতীয় সংসদ অনুপস্থিত থাকায় এবারের বাজেট টেলিভিশনের মাধ্যমে জাতির উদ্দেশে ভাষণ আকারে উপস্থাপন করবেন অর্থ উপদেষ্টা। রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশের মাধ্যমে বাজেট অনুমোদিত হবে, যা সর্বশেষ ঘটেছিল ২০০৭-০৮ অর্থবছরে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের জন্য আগামী অর্থবছরে ৫ লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা চলতি বছরের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সীমিত আকারের এই বাজেট বাস্তবমুখী হলেও রাজস্ব আহরণ ও ব্যয়ের দক্ষতা বাড়াতে না পারলে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন অর্জন কঠিন হবে।