নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার পাট্টা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুর রব মুনা বিশ্বাসের বাড়িতে হামলা করে চেয়ারম্যানসহ আহত সাতজনকে কুপিয়ে জখম করে বাড়ি ঘরে লুটপাট চালিয়েছে প্রতিপক্ষের লোকজন।
আহতরা হলেন ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রব মুনা বিশ্বাস, তার ভাই আব্দুর রহিম বিশ্বাস, রহিমের ছেলে ফোরকান, চেয়ারম্যানের স্ত্রী সায়লা খাতুন, চেয়ারম্যানের ছোট ভাই সাজেদুর রহমান ডাবলু, এনামুল হক বাবলু, এনামুল হকের স্ত্রী রেশমা খাতুন। এদের মধ্যে চেয়ারম্যান আব্দুর রব মুনা, দুই ভাই রহিম ও ডাবলু, চেয়ারম্যানের স্ত্রী সায়লা খাতুন, রহিমের ছেলে ফোরকান ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। পিটিয়ে ও কুপিয়ে গুরুতর আহত করা হয়েছে এই পাঁচজনকে।
বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১২টা থেকে ২টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত এ হামলার ঘটনা ঘটে। হামলা করে বাড়ির আসবাবপত্র ভাঙচুর ও লুটপাট করে মূল্যবান জিনিস নিয়ে যায় হামলাকারীরা। আব্দুর রব মুনা চেয়ারম্যানের বাড়ি পাট্টা ইউনিয়নের বয়রাট গ্রামে।
আব্দুর রব মুনা পাট্টা ইউনিয়ন পরিষদের দুই বারের চেয়ারম্যান ও পাট্টা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি। ৫ আগস্টের পর পরিষদের সদস্যরা চেয়ারম্যানের প্রতি অনাস্থা এনেছে। তারপর থেকে পরিষদে যান না আব্দুর রব মুনা। তার পরিবর্তে ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ও বিএনপি নেতা আকিদুল বিশ্বাস প্যানেল চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় বাড়ির আটটি রুমের দরজা ভাঙা, ভেতরের আসবাবপত্র ভেঙে ফেলা হয়েছে। আলমারিগুলো ভাঙা, বিছানা ছড়ানো ছিটানো। দুটি রুমের মধ্যে রক্তের দাগ এখনো রয়েছে। তিনটি রুমের সোফা, আলমারি ভেঙে বাইরে ফেলে দেওয়া হয়েছে।
চেয়ারম্যানের ভাই এনামুল হক বাবলু বলেন, “রাত ১২টার পর হঠাৎ করেই আমাদের রুমের দরজা ভাঙতে শুরু করে। দরজা ভেঙেই ঘরে ঢুকে হাতুড়ি, চাপাতি, রামদা দিয়ে এলাপাতাড়ি বাড়ির সবাইকে কুপাতে থাকে। তাদের আক্রমণে চেয়ারম্যান পড়ে গেলে তখন তার দুই পায়ে কুপাতে থাকে। তারপর মৃত ভেবে ফেলে রাখে। এরপর আমাদের ঘরে ঢুকে জিনিসপত্র ভেঙে ফেলে, আলমারিতে রাখা টাকা-পয়সা, সোনাদানা সব নিয়ে যায়। দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা ধরে ওরা এ কাজ করে। মূলত প্যানেল চেয়ারম্যান আকিদুল বিশ্বাসের নেতৃত্বে ৫০ থেকে ৬০ জন মানুষ এই হামলা করেছে। ভোর রাতে আমরা সবাই হাসপাতালে যাই। পাঁচজনের অবস্থা খুব খারাপ ছিল, তাদের ঢাকায় পাঠানো হয়। তিনজনের পায়ে অপারেশন করতে হবে।”
বাবলুর স্ত্রী রেশমা খাতুন বলেন, “আমাদেরসহ মেয়েদের সোনার গহনা ছিল প্রায় ৩০ ভরি। সব নিয়ে গেছে। ফ্রিজ থেকে খাবার পর্যন্ত নিয়ে গেছে। ভয়ে ছোট ছোট ছেলে-মেয়ে ওদের পা জড়িয়ে ধরেছে। তারপরও কাউকে তারা ছাড়েনি। আমাদের সবাইকে কুপিয়ে জখম করেছে। আমার স্বামী হার্টের রোগী তাকেও ছাড়েনি। আমি পায়ে পর্যন্ত ধরে ছিলাম। কোনো কথায় শোনেনি। যাবার সময় বাড়ির সব মোবাইল ফোন নিয়ে যায়। আমরা অ্যাম্বুলেন্স ডাকব সেই উপায়ও ছিল না।”
আকিদুল বিশ্বাস জানান, “আমার সাথে তাদের কোনো শত্রুতা নেই। কেন তারা আমার নাম বলছে আমি জানি না। তবে গত ১৭ বছর চেয়ারম্যান ও তার লোকজন এলাকার মানুষকে জিম্মি করে রেখেছিল। তাদের উপর অনেক মানুষের রাগ ও ক্ষোভ রয়েছে।”
পাংশা থানার ওসি মোহাম্মদ সালাউদ্দিন জানান, “পূর্ব শত্রুতার জেরে তাদের প্রতিপক্ষ এ ঘটনা ঘটিয়েছে। ঘটনার পর থেকে পুলিশ এলাকায় গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে। সকালেও পুলিশ গিয়েছিল। এখন পর্যন্ত তাদের পক্ষ থেকে থানায় কোনো অভিযোগ দেয়নি।”