বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী রাজবাড়ী জেলা সংসদের উদ্যোগে ‘হৃদয়ে রবীন্দ্রনাথ, চেতনায় নজরুল’ প্রতিপাদ্য সামনে রেখে রবীন্দ্র-নজরুল জয়ন্তী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের রাজবাড়ী জেলা সংসদের সভাপতি অধ্যাপক শংকর চন্দ্র সিনহা। অনুষ্ঠানের সঞ্চালনায় করেন উদীচী রাজবাড়ী জেলা সংসদের সাধারণ সম্পাদক এজাজ আহম্মেদ ও উদীচী অন্যতম সদস্য ত্রয়ী বিশ^াস।
আগুনের পরশমনি ছোঁয়াও প্রাণে গানের মধ্যে দিয়ে আমাদের অনুষ্ঠান শুরু হয়। এরপর একক ও সমবেত সংগীত, কবিতা আবৃত্তি ও নৃত্য পরিবেশন করা হয়। সমবেত সংগীতের মধ্যে উদীচীর শিল্পীরা ‘হে নূতন দেখা দিক আর বার, মনের রঙ লেগেছে, এদিন আজি কোন ঘরে গো, মোরা ঝঞ্জার মতো উদ্দ্যাম, আজি শুভ দিনে পিতার ভবনে, তারা সব জয়ধ্বনি কর, ওই নতনের কেতন উড়ে, ভেঙেছো দুয়ার এসেছ জ্যোতির্ময় গান পরিবেশন করেন। বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী রাজবাড়ী জেলা সংসদের সাংগঠনিক সম্পাদক ধীরেন্দ্রনাথ দাস ‘প্রথম আদিতো তব’, উদীচীর দপ্তর সম্পাদক সুমা কর্মকার নজরুল সংগীত ‘যত ফুল তত ভুল’, উদীচীর সংগীত বিষয়ক সম্পাদক মো. আবদুল জব্বার নজরুল সংগীত ‘খেলিছো এবিশ^ লয়ে, ত্রয়ী বিশ^াস রবীন্দ্র সংগীত ‘বধু কোন আলো লাগলো চোখে’, চায়না সরকার শর্মী রবীন্দ্র সংগীত ‘তুমি ডাক দিয়েছো কোন সকালে’, গীতশ্রী বিশ^াস ‘জাগরণে যায় বিভারনী’ গান পরিবেশন করেন।
দিলীপ কুমার মন্ডল আবৃত্তি করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা ‘প্রশ্ন’, চায়না সাহা আবৃত্তি করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দেবতার গ্রাস এবং ফাহমিদা সুলতানা বহ্নি আবৃত্তি করেন কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা আগমনী।
নৃত্য পরিবেশন করেন সৃজিতা বিশ^াস মিঠি, পূর্বা বিশ^াস, কথা বিশ^াস ও লাবন্য সরকার।
গান, কবিতা ও নৃত্যেও মাঝে চলতে থাকে বাংলা সাহিত্যের দুই দিকপার বিশ^কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সৃষ্টিকর্ম নিয়ে আলোচনা ও অনুভূতি প্রকাশ। এতে অংশগ্রহণ করেন প্রবীণ রাজনীতিবিদ বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) রাজবাড়ী জেলা কমিটির সভাপতি কমরেড আবদুস সামাদ মিয়া, রাজবাড়ী শিল্পকলা একাডেমীর কালচারাল অফিসার মামুন বিল সালেহ, নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক ফকীর শাহাদত হোসেন, উদীচী রাজবাড়ী জেলা সংসদের সহসভাপতি আজিজুল হাসান খোকা, উদীচী নেতা কমল কে সরকার। সম্মিলিত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করার মধ্যে দিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি করা হয়।
বক্তারা বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন মূলত এক কবি। মাত্র আট বছর বয়সে তিনি কাব্যরচনা শুরু করেন। তার প্রকাশিত মৌলিক কাব্যগ্রন্থের সংখ্যা ৫২। তবে বাঙালি সমাজে তার জনপ্রিয়তা প্রধানত সংগীত ¯্রষ্টা হিসেবে। রবীন্দ্রনাথ প্রায় দুই হাজার গান লিখেছিলেন। কবিতা ও গান ছাড়ও তিনি ১৩টি উপন্যাস, ৯৫টি ছোটগল্প, ৩৬টি প্রবন্ধ ও গদ্যগ্রন্থ এবং ৩৮টি নাটক রচনা করেছিলেন। রবীন্দ্রনাাথ ঠাকুরের রাজনৈতিক দর্শন অত্যন্ত জটিল। ১৮৯০ সালে প্রকাশিত মানসী কাব্যগ্রন্থের কয়েকটি কবিতায় রবীন্দ্রনাথের প্রথম জীবনের রাজনৈতিক ও সামাজিক চিন্তাভাবনার পরিচয় পাওয়া যায়। ১৯১৯ সালে জালিয়ালাবাগ হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে তিনি নাইটহুড বর্জন করেন।
দুই বিশ্বযুদ্ধের মধ্যবর্তী সময়ে কাজী নজরুল ইসলামের আবির্ভাব। তিনি সমকালীন জাতীয় রাজনীতি ও আন্তর্জাতিক রাজনীতির দ্বারা দারুণভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন। স্বদেশীবাদ আন্দোলন এবং সশস্ত্র বিপ্লবে তাঁর ছিল অগাধ আস্থা। ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দের জুলাই মাসে তিনি মুজাফফর আহমেদের সঙ্গে প্রকাশ করেন, ‘নবযুগ’। নবযুগে সাংবাদিকতার সাথে সাথে তিনি বেতারে ও কাজ করছিলেন দুই বছর। পরে তিনি নিজেই প্রকাশ করেন, ‘ধূমকেতু’। ‘আনন্দময়ীর আগমনে’ কবিতাটির জন্য এক বছর সশ্রম কারাদন্ড হয় তাঁর। ‘লাঙল’ পত্রিকায় কৃষানের গান, শ্রমিকের গান প্রভৃতি রচনা করেন। এর পরে তিনি জড়িয়ে পড়েন বঙ্গীয় কৃষক শ্রমিক দলের সঙ্গে। তাঁকে কারারুদ্ধ থাকতে হয় প্রেসিডেন্সি জেল, হুগলি জেল এবং বহরমপুর জেলে। ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দে হিন্দু মুসলমান দাঙ্গা ভীষণভাবে নাড়া দিয়ে যায় কাজী নজরুল ইসলামকে। এই উপলক্ষে কবি লেখেন ‘হিন্দু মুসলিম’, ‘পথের দিশা’, ‘মন্দির ও মসজিদ প্রভৃতি প্রবন্ধ।