নিজস্ব প্রতিবেদক: টানা আটদিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে শেষ পর্যন্ত হার মানলো গোয়ালন্দ লোটাস কলেজিয়েট স্কুলের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী নিতুন সরকার (১৫)। সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি মোহাম্মদ রাকিবুল ইসলাম নিতুনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। নিতুন ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার নিমাই সরকারের ছেলে। পরিবারসহ গোয়ালন্দ পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের হাসেম বেপারীর বাড়িতে ভাড়া থাকতেন তিনি।
গত ২৭ জানুয়ারি নিতুনদের ভাড়া বাসায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয় বলে ধারণা করা হচ্ছে। মুহূর্তেই আগুন চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় নিতুন ঘরের ভেতরে আটকা পড়ে যায়। পরে সাহসী কিছু স্থানীয় বাসিন্দা দেয়াল ভেঙে তাকে উদ্ধার করে। এই ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়।
প্রথমে নিতুনকে গুরুতর দগ্ধ অবস্থায় গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখান থেকে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। পরে অবস্থার আরও অবনতি হলে রাতেই তাকে ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে নেওয়া হয়। টানা আটদিন চিকিৎসাধীন থাকার পর সোমবার সকালে তার মৃত্যু হয়।
গোয়ালন্দ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের টিম লিডার মো. সাবেকুল ইসলাম জানান, বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লাগে। তবে সরকারি কামরুল ইসলাম কলেজ সংলগ্ন সড়কে নির্মাণ সামগ্রী ফেলে রাখা এবং অপরিকল্পিত ভবনের দেয়াল থাকায় অগ্নিনির্বাপণ গাড়ি ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে বিলম্ব হয়। পরে হাতের ফিতা ব্যবহার করে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হয়।
নিতুনের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে গোয়ালন্দে শোকের ছায়া নেমে আসে। এলাকাবাসী তার পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধ আরও দুজন—ভাড়াটিয়া জাহিদুল ইসলামের স্ত্রী সোমা আক্তার (৪০) ও এক অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি—গোয়ালন্দ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
এলাকাবাসী ও স্থানীয়রা দুঃখ প্রকাশ করে বলেছেন, তারা নিতুনকে জীবিত উদ্ধার করে আশার আলো দেখেছিলেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে বাঁচানো গেল না।