নিজস্ব প্রতিবেদক: চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় ডাকাত সন্দেহে গণপিটুনিতে নিহত দুই ব্যক্তির পরিচয় পাওয়া গেছে। নিহতরা হলেন উপজেলার কাঞ্চনা ইউনিয়নের মধ্যম কাঞ্চনা এলাকার মাহমুদুল হকের ছেলে মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিন (৪৫) এবং গুরগুরি এলাকার আবদুর রহমানের ছেলে মোহাম্মদ ছালেক (৩৫)। গতকাল সোমবার (৪ মার্চ) রাতে সাতকানিয়ার এওচিয়া ইউনিয়নের ছনখোলা পশ্চিমপাড়া এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সোমবার রাত সাড়ে ৯টা থেকে ১০টার মধ্যে নেজাম উদ্দিনসহ একদল যুবক ৪-৫টি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে ছনখোলা পশ্চিমপাড়া এলাকায় যান। তাঁদের দেখে স্থানীয় একটি মসজিদের মাইকে ঘোষণা দেওয়া হয় যে, এলাকায় ডাকাত এসেছে। মাইকের ঘোষণা শুনে উত্তেজিত এলাকাবাসী তাঁদের ঘিরে ফেলে এবং গণপিটুনি দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই নেজাম ও ছালেক প্রাণ হারান।
জামায়াতে ইসলামীর সাতকানিয়া উপজেলার কাঞ্চনা ইউনিয়নের সেক্রেটারি জায়েদ হোছেন দাবি করেছেন, নিহত ব্যক্তিরা জামায়াতের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। তিনি অভিযোগ করে বলেন, একটি সালিস বৈঠকের কথা বলে তাঁদের ছলচাতুরীর মাধ্যমে এওচিয়া এলাকায় ডেকে নিয়ে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। গুজব ছড়িয়ে তাঁদের পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। তবে জামায়াতের উপজেলা আমির মাওলানা কামাল উদ্দিন জানিয়েছেন, নিহত ব্যক্তিরা জামায়াতের তালিকাভুক্ত কর্মী নন, তবে জামায়াতের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন।
এদিকে, স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বছরের ৫ আগস্টের পর এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে নেজাম উদ্দিনের সঙ্গে প্রতিপক্ষের বিরোধ চলছিল। এলাকাবাসীর দাবি, দুই পক্ষের মধ্যে ইতিপূর্বে দুইবার গোলাগুলির ঘটনাও ঘটেছে।
সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাহেদুল ইসলাম জানান, ঘটনাস্থল থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, আটটি গুলির খোসা এবং একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা জব্দ করা হয়েছে। নিহতদের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া, গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত চারজন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। আহত ব্যক্তিরা হলেন ওবায়দুল হক (২২), নাসির উদ্দিন (৩৮), আব্বাস উদ্দিন (৩৮) এবং মো. মামুনুর রশিদ (৪৫)।
ওসি জাহেদুল ইসলাম আরও বলেন, “নিহত ব্যক্তিরা রাতে কেন ওই এলাকায় গিয়েছিলেন এবং কেন তাঁদের ওপর এমন হামলা হয়েছে, তা জানতে তদন্ত চলছে। এ ঘটনায় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
ঘটনার পর থেকে এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক অবস্থানে রয়েছে এবং তদন্তের পর প্রকৃত ঘটনা উন্মোচিত হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।