রাতের আকাশে ঝলমলে জোছনার আলো, আর তার সাথে সংগীত, কবিতা, রম্য কথা আর আড্ডায় মুগ্ধ এক সন্ধ্যা—এমনই এক মনোমুগ্ধকর আয়োজন ছিল ‘জোছনা বিলাস’।
সোমবার (১২ মে) সন্ধ্যায় রাজবাড়ী শহরের অদূরে রামকান্তপুর এলাকায় অবস্থিত রাবেয়া কাদের স্মৃতি পাঠাগারের আয়োজনে এই জোছনা বিলাস অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানটি ছিল এক ব্যতিক্রমী সাংস্কৃতিক আয়োজন, যেখানে জোছনামাখা রাতের সৌন্দর্যকে ঘিরে আবেগ, অনুভব ও সাহিত্যের ছোঁয়া মিশে তৈরি হয় এক অনন্য আবহ।
অনুষ্ঠানের সূচনায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জামান চৌধুরী বাবলা। তিনি বলেন, “প্রযুক্তির এই যুগে মানুষ দিনদিন প্রকৃতি ও কাব্যিকতার সৌন্দর্য থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। তাই জোছনার মতো প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সাথে সংস্কৃতির মেলবন্ধনে আমরা চেয়েছি একটুখানি অন্যরকম প্রশান্তি দিতে।”
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন সাবেক জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সৈয়দ সিদ্দিকুর রহমান ও রাজবাড়ী ডিবেট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ফারুক উদ্দিন। তারা জোছনা বিলাসের মত আয়োজনকে সমাজে সৌন্দর্যবোধ, সহমর্মিতা ও মানবিক মূল্যবোধ জাগিয়ে তোলার একটি প্রয়াস হিসেবে উল্লেখ করেন।
অনুষ্ঠানের সংগীত পরিবেশনায় অংশ নেন আব্দুল জব্বার, তাপস কর্মকার, রণজিৎ কুমার এবং সুমন আহমেদ। তাদের কণ্ঠে রবীন্দ্রসংগীত, নজরুল সংগীত, আধুনিক গান ও লোকজ সুরে মুগ্ধ হয় দর্শক-শ্রোতারা।
কবিতা আবৃত্তিতে অংশ নেন কবি নেহাল আহম্মেদ এবং রাজবাড়ী সরকারি কলেজের ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক সুরোজিত চক্রবর্তী। তারা আবৃত্তির মাধ্যমে শ্রোতাদের মনোজগতে ছুঁয়ে যান কাব্যিক অনুভবে।
রম্য কথনের মাধ্যমে সন্ধ্যায় হাস্যরস যোগ করেন সাবেক সোনালী ব্যাংক কর্মকর্তা আতাউর রহমান আতা। তার চটুল অথচ গভীর মর্মবাণীতে দর্শকের মাঝে আনন্দের রেশ ছড়িয়ে পড়ে।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন কবি খোকন মাহমুদ।
অনুষ্ঠানে স্থানীয় সাংস্কৃতিককর্মী, শিক্ষার্থী, লেখক ও সাধারণ মানুষ অংশগ্রহণ করেন। চারপাশে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ওপরে খোলা আকাশ আর মৃদু জোছনার আলোয় উদ্ভাসিত এক সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক আয়োজনটি হয়ে ওঠে এক স্মরণীয় অভিজ্ঞতা।
রাবেয়া কাদের স্মৃতি পাঠাগার সূত্রে জানা গেছে, প্রতিবছর পূর্ণিমার রাতে এমন আয়োজন করার পরিকল্পনা রয়েছে।
জোছনার আলোয় মাতোয়ারা সন্ধ্যায় উপস্থিত সবার মুখেই ছিল তৃপ্তির হাসি—এক সন্ধ্যা জোছনার ছায়ায়, কবিতার ছন্দে।