দেশের অন্যতম মোবাইল আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ‘নগদ’-এর পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছে ডাক অধিদপ্তর। হাইকোর্টের এক আদেশে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রশাসক দলের ওপর স্থগিতাদেশ আসায় প্রতিষ্ঠানটির নেতৃত্বে যে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছিল, তা নিরসনে আজ এই সিদ্ধান্ত নেয় ডাক অধিদপ্তর।
ডাক অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আবু তালেবকে প্রধান করে গঠিত আট সদস্যের একটি কমিটি ইতোমধ্যেই নগদের বনানী কার্যালয়ে গিয়ে কার্যক্রম শুরু করেছে। নতুন কমিটির দায়িত্ব হবে নগদের সার্বিক পরিচালনা তদারকি ও প্রয়োজনীয় পর্যবেক্ষণ রিপোর্ট প্রস্তুত করা।
ডাক অধিদপ্তরের জারি করা এক অফিস আদেশে জানানো হয়, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যবের নির্দেশে ডাক অধিদপ্তর নগদের দায়িত্ব গ্রহণ করে। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের স্থগিতাদেশের প্রেক্ষাপটে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হয়।
কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন মো. আমিনুর রহমান, এস এম ওয়াদুদুল ইসলাম, মো. মনিরুজ্জামান, সঞ্জিত চন্দ্র পণ্ডিত, মো. সাহেদুজ্জামান সরকার, খন্দকার শাহনুর সাব্বির ও এ কে এম মনিরুজ্জামান। প্রয়োজন হলে কমিটি সদস্য সংখ্যা বাড়াতে পারবে।
এদিকে হাইকোর্টের আদেশের বিপরীতে বাংলাদেশ ব্যাংক সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আবেদন করেছে। শুনানির তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে আগামী ১৯ মে।
প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের পতনের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার নগদের পরিচালনায় প্রশাসক নিয়োগ দেয়। সেই সময়ের নিরীক্ষায় ২,৩৫৬ কোটি টাকার আর্থিক জালিয়াতি এবং ভুয়া পরিবেশক ও এজেন্ট দেখিয়ে অতিরিক্ত ই-মানি তৈরির অভিযোগ উঠে আসে। এসব ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংক ২৪ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করে।
তবে চমক জাগিয়ে, সেই মামলার আসামিদের একজন—নগদের সাবেক পরিচালক মো. সাফায়েত আলম—সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটির নতুন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। তিনি দায়িত্ব নিয়েই মানবসম্পদ বিভাগে রদবদল শুরু করেছেন এবং গত দুই দিনে ১৯ জন শীর্ষ কর্মকর্তাকে ছাঁটাই করেছেন। আরও দুই অভিযুক্তকেও নতুন দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, যা নগদের ভবিষ্যৎ পরিচালনায় অস্থিরতা বাড়িয়ে তুলেছে।
পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, এ ধরনের পরিবর্তন এবং মামলার আসামিদের পুনর্বাসন শুধু প্রতিষ্ঠানটির অভ্যন্তরীণ স্বচ্ছতাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করছে না, বরং দেশের মোবাইল আর্থিক সেবার খাতেও দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলতে পারে। এখন নজর ১৯ মে’র শুনানির দিকে, যেখানে আদালতের রায় পরবর্তী দিক নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।