আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ ক্যালিফোর্নিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে নতুন করে ছড়িয়ে পড়া দাবানল ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। প্রবল বাতাস এবং শুষ্ক আবহাওয়ার কারণে আগুন দ্রুত বিস্তৃত হচ্ছে। ইতোমধ্যে হাজারো মানুষকে তাদের বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিতে বাধ্য করা হয়েছে।
আগুনের বিস্তার
দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার সান বার্নার্ডিনো এবং সান্তা বারবারা কাউন্টিগুলোতে দাবানল সবচেয়ে বেশি তাণ্ডব চালাচ্ছে। বনাঞ্চল এবং শহরতলির বড় একটি অংশ আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দাবানলের তীব্রতা এতটাই বেশি যে নিয়ন্ত্রণে আনতে হেলিকপ্টার এবং বিমান থেকে পানি ও দাহনরোধী কেমিক্যাল ছিটানো হচ্ছে।
ক্ষয়ক্ষতি
প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ী, দাবানলে এখন পর্যন্ত অন্তত ২০ হাজার একর জমি পুড়ে গেছে। শতাধিক বাড়ি এবং স্থাপনা সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, কয়েকটি এলাকা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে এবং রাস্তাঘাটের পরিস্থিতি বিপর্যস্ত। এখন পর্যন্ত কোনো প্রাণহানির খবর না পাওয়া গেলেও ক্ষতির পরিমাণ বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রম
ফায়ার ব্রিগেড, পুলিশ এবং জাতীয় গার্ড সম্মিলিতভাবে উদ্ধার তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গেভিন নিউসম দাবানল আক্রান্ত এলাকাগুলোতে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন। ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দাদের জন্য অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র এবং খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে।
আবহাওয়ার ভূমিকা
ক্যালিফোর্নিয়ার দাবানল পরিস্থিতি আরও খারাপ করেছে সেখানে চলমান শুষ্ক মৌসুম। গত কয়েক মাস ধরে বৃষ্টিপাতের অভাবে ভূমি অত্যন্ত শুষ্ক হয়ে গেছে, যা আগুনের দ্রুত বিস্তারে ভূমিকা রাখছে। আবহাওয়া অফিস সতর্ক করেছে যে, আগামী কয়েকদিন প্রবল বাতাসের কারণে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে।
পরিবেশগত প্রভাব
দাবানলের ফলে বিশাল পরিমাণে কার্বন ডাই-অক্সাইড এবং ক্ষতিকর গ্যাস বায়ুমণ্ডলে ছড়াচ্ছে। এতে স্থানীয় বন্যপ্রাণী এবং বাস্তুতন্ত্র ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বনাঞ্চলের বড় একটি অংশ ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় পরিবেশগত ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
আন্তর্জাতিক সাহায্যের আহ্বান
ক্যালিফোর্নিয়ার প্রশাসন ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং প্রতিবেশী রাজ্যগুলোর কাছে সাহায্যের আহ্বান জানিয়েছে। দাবানলের ভয়াবহতা রোধে প্রযুক্তি, তহবিল এবং দক্ষ জনশক্তি প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
এই ধরণের দাবানল এড়াতে ক্যালিফোর্নিয়া সরকার বন ব্যবস্থাপনা এবং আগুন প্রতিরোধে নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের পরিকল্পনা করেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, জলবায়ু পরিবর্তন এবং বনের অপরিকল্পিত ব্যবস্থাপনার কারণে এ ধরনের দুর্যোগের মাত্রা ক্রমাগত বাড়ছে।
এই ভয়াবহ দাবানল ক্যালিফোর্নিয়ার ইতিহাসে আরেকটি কালো অধ্যায় হিসেবে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন এবং প্রকৃতির পুনর্জাগরণে কতটা কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়, তা সময়ই বলে দেবে।